বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অনলাইন পত্রিকাগুলোর নিবন্ধনকে কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক করেছে। সরকার বলছে, অপসাংবাদিকতা বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ।
অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোকে আগামী ২৫ শে ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে নির্দেশনা জারী করা হয়েছে।
বর্তমানে যেসব অনলাইন নিউজ পোর্টাল চলছে এবং ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদেরকেও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে একটি হলফনামাও জমা দিতে হবে এবং সে তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রনালয় এ রেজিষ্ট্রেশন দেবে।
তথ্য মন্ত্রনালয় বলছে, অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ‘অপসাংবাদিকতা’ বন্ধ করতেই এই নিবন্ধনের উদ্যোগ।
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম হিসেবে অনলাইন এখন দিনে দিনে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাংলাদেশে যেভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, ধারনা করা হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে এই মাধ্যমের জনপ্রিয়তা টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রকে ছাড়িয়ে যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে অনলাইন পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করেছে।
তথ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব মর্তুজা আহমেদ বলেন , “প্রত্যেকের কিছু নীতি-নৈতিকতার মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু অনেকে সেগুলো প্রয়োজন মনে করছেন না। যখন যেভাবে পারছেন অনলাইন খুলে দিচ্ছেন।”
তথ্য সচিব বলেন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে শৃঙ্খলার মাধ্যমে পরিচালনার জন্যই এই নিবন্ধনের উদ্যোগ।
বাংলাদেশে এখন ঠিক কতগুলো অনলাইন সংবাদমাধ্যম কাজ করছে সেটির সুনিদ্দির্ষ্ট কোন পরিসঙখ্যান নেই। এমন অনেক অনলাইন পোর্টাল আছে যাদের খবরের সত্যতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন আছে। অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় যাচাই করা তথ্যের চেয়ে গুজবের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেই তাদের মনোযোগ বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষক ফাহমিদুল হক মনে করেন নিবন্ধনের উদ্যোগ প্রয়োজনীয়।
মি: হক বলেন, “আমার মনে হয় এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে না। এখন অনলাইন মিডিয়া কমিউনিটিতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।”
আমার মনে হয় এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে না। এখন অনলাইন মিডিয়া কমিউনিটিতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে
সেজন্য এখানে শৃংখলা আনা দরকার বলে তিনি মনে করেন। কেউ পেশাদারি সাংবাদিকতা করতে চাইলে নিবন্ধনের মধ্যে থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তথ্য মন্ত্রনালয় বলছে যেসব অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নিবন্ধন পাবে সেসব প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে। যারা অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিচালনা করেন তারাও এই নিবন্ধনের পক্ষে।
তবে এর আড়ালে আবার অনেকে শংকাও প্রকাশ করছেন। ঢাকার একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম নতুনবার্তা ডট কমের সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমেদ বলেন বেশিরভাগ অনলাইন নিউজ পোর্টাল নামধারী এবং সেখানে পেশাদারিত্ব বলে কিছু নেই।
তিনি নিবন্ধন পক্ষে হলেও বিষয়টি নিয়ে তার মধ্যে এক ধরনের আশংকাও আছে।
মি: আহমেদ বলেন , “কারন সেখানে একেবারে সরকারের মতের মিল হলেই কেবল তারা অনুমতি পাবে। অন্যরা কেউ পাবে না। তখন পেশাদারিত্বের বিষয়টি খুব একটা কাজে লাগবে বলে আমার মনে হয় না।”
তবে তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ বলছেন অনলাইনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
কর্মকর্তারা বলছেন পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেল চালুর ক্ষেত্রে অনুমোদনের যেমন প্রয়োজন তেমনি অনলাইনের ক্ষেত্রেও নিবন্ধন এখন সময়ের দাবী।